শাহী জামে মসজিদের বর্ধিতকরণ কাজের ছাদ ঢালাই এর উদ্বোধন


রাজশাহীর পবার বাগধানীতে ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদের বর্ধিতকরণ কাজের প্রথম তলার ছাদ ঢালাই এর উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান অতিথি থেকে এ ছাদ ঢালাই কাজের উদ্বোধন করেন নওহাটা পৌরসভার মেয়র ও পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাফিজুর রহমান হাফিজ।
রাজশাহীর তিন গম্বুজবিশিষ্ট ঐতিহাসিক বাগধানী শাহী জামে এই মসজিদটি। তবে মুসল্লী বেশী হওয়ায় বিশেষ করে জুম্মার নামাজে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিপাকে পড়েন তারা। প্রেক্ষিতে মুল মসজিদ অবকাঠামো ঠিক রেখে পাশে নামাজের জন্য ছাদ ঢালাইয়ের কাজের উদ্বোধন করলেন মেয়র হাফিজুর রহমান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মসজিদ কমিটির সভাপতি রুস্তোম আলী, ইমাম মো. গোলাম মুর্শেদ, উপদেষ্টা সদস্য আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দিন ও আইয়ুব আলী, নওহাটা পৌর ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি আবু সাঈদ, সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, সমাজসেবক মো. মোস্তফা প্রমুখ।
জানা যায়, আজ থেকে ২২৬ বছরের ঐতিহ্যের স্মারক বহন করছে। যখন নদীপথই ছিল একমাত্র পথ, তখন এই মসজিদকে ঘিরেই এখানে বারনই নদীর ঘাট ছিল। সেই সূত্র ধরে এখানে এখনও সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। ওই এলাকার একমাত্র প্রাচীন হাট এটিই। মসজিদটি গড়ে ওঠার পর থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এখানে মানত-সদকা করে থাকেন এবং নামাজ আদায় করেন।
রাজশাহী জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে নওহাটা পৌরসভার বাগধানী কাচারিপাড়ায় মসজিদটি অবস্থিত। এর একপাশ দিয়ে তানোর-রাজশাহী পাকা রাস্তা এবং অপর পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বারনই নদী। এর ওপর দিয়ে নির্মিত হয়েছে সংযোগ ব্রিজ। মসজিদ সংলগ্ন এলাকা সবুজায়নের শ্যামল প্রান্তর। এখন পর্যন্ত রাজশাহীর যে কটি প্রাচীন স্থাপনা রয়েছে, তন্মধ্যে এটি অন্যতম। দুই শতাব্দী পুরনো ইতিহাস যেন এখনও লেগে আছে মসজিদের প্রতিটি ইট-পাথরে। এর প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী যেকোনো পর্যটককে বিমোহিত করবে। নান্দনিক সৌন্দর্য দর্শনের জন্য যারা দেশের আনাচে-কানাচে চষে বেড়ান, তাদের পিপাসা মেটাতে পারে এ মসজিদ।
মসজিদের ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে সদর দরজা। সেখানে ফারসি অক্ষরে লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে। যেখানে কালো বর্ণে লিখা আছে ‘মুন্সি মোহাম্মদ এনায়েতুল্লাহ বাংলা ১২০০ সালে নির্মাণ করেন এ শাহী মসজিদটি।’
৩ হাজার ২০০ বর্গফুট আয়তনের মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট। মসজিদের তিনটি মিহরাব, তিনটি দরজা, দুটি জানালা ও একটি মিনার রয়েছে। মসজিদের চার কোনায় রয়েছে নকশাখচিত গম্বুজ আকৃতির মনোরম পিলার। মাথার ওপরে রয়েছে তিনটি সুদৃশ্য গম্বুজ, যা আকর্ষণ করবে যেকোনো পর্যটককেই। এ ছাড়া মসজিদের চারপাশের দেয়ালের ভেতর ও বাইরে চিনামাটিতে খচিত মনোরম নকশা রয়েছে।
১৯৯০ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মসজিদের পাশে অবস্থিত কাচারিঘরের ধ্বংসাবশেষ এখনও তার সাক্ষ্য বহন করছে। সংস্কার না করায় এরই মধ্যে মসজিদটির অনেক কিছুই কালের গর্ভে বিলীন হয়েছে। তিন গম্বুজবিশিষ্ট প্রাচীন ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদটি সংস্কারের অভাবে নষ্টই হতে বসেছিল।
তবে তিন বছর আগে রাজশাহীর পবা উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম হোসেনের প্রচেষ্টায় ঐতিহাসিক বাগধানী শাহী মসজিদের দায়িত্ব নেয় প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর। স্থানীয়দের মতে, এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মসজিদটির প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ নিলে এটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে রূপ নিতে পারে।