পাসপোর্ট দিয়ে বন্ড ক্রয়ের দাবি সৌদি প্রবাসীদের


প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগে আনতে তিন ধরনের বন্ড চালু করা হয়। এগুলো হলো ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড। আগে পাসপোর্ট দিয়েই এসব বন্ডে বিনিয়োগ করার সুযোগ পেতেন প্রবাসীরা। এখন পাসপোর্টের পাশাপাশি জাতীয় পরিচয়পত্রও (এনআইডি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অনেক প্রবাসী। বিশেষ করে যারা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করেছেন, তাদের পক্ষে বাংলাদেশে এসে এনআইডি নেওয়া সম্ভব হয়নি। আবার বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলো থেকেও এনআইডি প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়নি। অন্যদিকে এনআইডি বাধ্যতামূলক করার পর এনআরবি বন্ডে প্রবাসীদের বিনিয়োগও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এ অবস্থায় এনআরবি বন্ড কিনতে এনআইডি শর্ত শিথিল করার দাবি জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে যতদিন এনআইডি দেওয়া সম্ভব না হয়, তত দিন পাসপোর্ট দিয়েই বন্ড কেনার সুযোগ দেওয়ার দাবি প্রবাসীদের।
সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে পূর্বের ন্যায় পাসপোর্ট দিয়েই বন্ড কেনার সুযোগ ও ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। ওই চিঠির অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংকেও পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবসহ আরও কয়েকটি দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেও একই অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর জাতীয় সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি এনআরবি বন্ডের লেনদেনও জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনা হয় এবং ওইদিন থেকে এসব বন্ডে বিনিয়োগ করতে এনআইডি বাধ্যতামূলক করা হয়। এর আগে ২০২০ ডিসেম্বরে এনআরবি বন্ডগুলোতে বিনিয়োগে ঊর্ধ্বসীমা আরোপ করা হয়। যদিও গত এপ্রিল থেকে দুটি বন্ডের বিনিয়োগে ঊর্ধ্বসীমা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তারপরও এনআরবি বন্ডগুলোতে বিনিয়োগ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সেও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের এনআরবি বন্ড বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৭৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা, যা পুরো অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার আড়াই শতাংশেরও কম। এ সময়ে যে পরিমাণ বন্ড বিক্রি হয়েছে, তার ২৫ গুণেরও বেশি ভাঙিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন প্রবাসীরা। এর পরিমাণ ১ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। ফলে নিট বিনিয়োগও ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। এর পরিমাণ ১ হাজার ৮০ কোটি টাকারও বেশি।
অন্যদিকে, গত অর্থবছরের পুরো সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীদের মাঝে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর। কিন্তু এরপর আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও করোনাসহ নানা অজুহাতে সেই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অর্থমন্ত্রীকে পাঠানো আবুধাবি দূতাবাসের চিঠিতে বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রবাসী পেশাজীবী এবং ব্যবসায়ীরা এনআরবি বন্ড ক্রয়ের মাধ্যমে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে আসছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরাও প্রতিবছরই এসব বন্ডে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সকলের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করায় অনেকেই তা কিনতে যোগ্য হচ্ছেন না। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যতীত স্বাগতিক দেশ হতেও জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও এর আগে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে, দূতাবাস বা কনস্যুলেট জেনারেল অফিস থেকে এনআইডি প্রদান করা হবে। এ ছাড়া দেশ হতে এনআইডি গ্রহণ বেশ সময়সাপেক্ষ বিধায় অনেক প্রবাসী এনআইডি গ্রহণের সুযোগ হতে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এমন অবস্থায়, জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবাসী ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী তাদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রার অন্তর্মুখী প্রবাহ হ্রাস পাচ্ছে। তাই পূর্বের ন্যায় পাসপোর্টের কপি দাখিলের মাধ্যমেও বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা হলে দেশে অন্তর্মুখী রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস,গত এপ্রিলে ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ক্রয়ের সিলিং তুলে দেওয়া হয়েছে।
তবে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ঊর্ধ্বসীমা বহাল রাখা হয়েছে। চিঠিতে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসী ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী, জনতা ব্যাংকের স্থানীয় চারটি শাখার ব্যবস্থাপক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে দূতাবাস মনে করে বৈদেশিক মুদ্রার অন্তর্মুখী প্রবাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া অত্যন্ত যৌক্তিক হবে। কারণ এ বন্ডের মাধ্যমে গৃহীত ঋণের মূলধন ব্যতীত মুনাফা প্রদানে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রায় কোনও দায় নেই।
যদিও বৈদেশিক কোনও উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করলে অবশ্যই তা সুদ-আসলে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের দায়বদ্ধতা রয়েছে। প্রয়োজনবোধে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের মুনাফার হার বিভিন্ন বিনিয়োগ সীমা প্রবর্তনপূর্বক যৌক্তিকীকরণ করা যেতে পারে। বিনিয়োগকারীদের বৈদেশিক মুদ্রা বাংলাদেশি টাকায় রূপান্তর করে বিনিয়োগ করতে হয় বিধায় বিনিয়োগ সীমা এবং মুদ্রা বিনিময়হারের বিষয় ও মুনাফা হার যৌক্তিকীকরণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এ স্কিমটিরও ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করা অত্যন্ত সময়োপযোগী।