নদীমাতৃক দেশে পানির সংকট লজ্জার


নদীর দেশে পানি সংকট। বাংলাদেশের জনগণসহ বিশ্বের বহু মানুষ নিরাপদ পানি সমস্যায় জর্জরিত। তারমধ্যে সুপেয় পানির সংকট কমবেশি সব এলাকাতেই আছে। তবে দক্ষিণাঞ্চল ও পাহাড়ি জনপদে সমস্যা অনেক গভীর। মূলত পরিবেশ বিপর্যয়, বিশ্বায়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, দ্রুত অপরিকল্পিত শিল্পায়ন-নগরায়ণ, দূষণ-অপচয়ের কারণে প্রতিনিয়ত পানির ওপর চাপ বাড়ছে। এ ছাড়া খরা-তাপদাহে প্রাকৃতিক উৎসগুলো শুকিয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে লবণাক্ততা বেড়ে পানির আঁধার নষ্ট হওয়া, মাত্রাতিরিক্ত গভীর নলকূপ স্থাপনের ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় সুপেয় পানির সংকট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। উপরন্তু নদী অববাহিকায় উজানের দেশগুলোর বিশালাকার বাঁধ বা ড্যাম নির্মাণে ভাটি অঞ্চলের দেশগুলোতে পানির প্রবাহ দ্রুত কমে গিয়ে পানি সংকট অধিকতর ত্বরান্বিত করছে। এভাবে যদি সুপেয় পানি অচিরেই মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে পানি নিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুদ্ধে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। নির্মম হলেও সত্য, আমরা সাময়িক সুবিধার জন্য ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছি। বিশেষ করে ঢাকা শহরে দৈনিক যে ২২ লাখ ঘনমিটার পানির প্রয়োজন, তার সিংহভাগই আসে ভূগর্ভস্থ পানি থেকে। যদি ঢাকাবাসীর পানির চাহিদা ভূপৃষ্ঠের উৎস থেকে জোগান দিতে পারতাম, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিছুটা হলেও নিরাপদ থাকত। এ ছাড়া কৃষিতে আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদের ফলে সেচযন্ত্রের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি তুলতে হচ্ছে। এসব কারণে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। অন্যদিকে পাহাড়ি জনপদের মানুষকে বছরের প্রায় পুরো সময় পানির সংকটে কাটাতে হয়। সেখানে সুপেয় পানির উৎস ছিল পাহাড়ি ছড়া ও ঝরনা। কিন্তু সমতল থেকে যাওয়া একশ্রেণির পাহাড়খেকো মানুষ উন্নয়নের নামে পাহাড় ও বন ধ্বংস করে ফেলছে। তাদের এ ধ্বংসযজ্ঞ কেবল পাহাড়িদের সুপেয় পানির উৎসই বন্ধ করে দিচ্ছে না, তাদের জীবনকেও করে তুলছে বিপন্ন। মরুভূমি বা অনাবৃষ্টির দেশে সুপেয় পানির সংকট মেনে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যে জনপদে অসংখ্য নদী-নালা, হাওর-বাঁওড়, খাল-ডোবা ইত্যাদি আছে, সেই জনপদে কেন পানির সংকট হবে? এ সংকটের মূলে আছে আমাদের ভুল উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি। এছাড়াও ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করার কারণে ঢাকা শহরে পানির স্তর বিপজ্জনক অবস্থায় চলে এসেছে। তাই আমাদের পানির ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করতে তিস্তাসহ সব নদীর পানিবণ্টনে দ্রুত চুক্তি হওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ভূপৃষ্ঠস্থ পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। পানির উৎসের ক্ষতি হয়, এমন কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা নেওয়া যাবে না। ‘দেশের ৯৮-৯৯ শতাংশ মানুষ সাধারণভাবে পানির সুবিধা পেলেও গুণগত মানসম্পন্ন নিরাপদ পানি এখনো সবার জন্য নিশ্চিত করা যায়নি। পানি শোধনাগার যা আছে, তা যথেষ্ট নয়। ফলে সরকারকে এসডিজি লক্ষ্য পূরণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এ বিষয়ে যত দ্রুত কর্মসূচি হাতে নেওয়া যায়, ততই মঙ্গল। নদীমাতৃক দেশে পানির সংকট বিষয়টাই লজ্জার, দুঃখের।