কাপাসিয়ার নরাইট বিল গাঢ় সবুজের বুকে এ যেন বাংলার ‘লাল স্বর্গ’


স্টাফ রিপোর্টার:
কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের পূর্ব অংশ ও টোক ইউনিয়নের দক্ষিণের অংশ নিয়েই নরাইট বিল বিস্তৃত। এদিকে লোকমুখে প্রচলিত এ বিলের রয়েছে ৯ টি গোপ। আর এ নয়টি আলাদা আলাদা গোপের সমন্বয়ে বিস্তৃতি লাভ করেছে নরাইট বিল। বিলে ফুটে আছে হাজার হাজার লাল শাপলা ফুল। যেন এক প্রাকৃতিক স্বর্গ। দেখেই দু’চোখ জুড়িয়ে যায়। সবাই একে শাপলা বিল নামেই চেনে। সূর্যের সোনালি রশ্মি পানিতে পড়তেই কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় বিলের সৌন্দর্য। বছরের এ সময়ে যারা ঢাকার আশেপাশে থাকেন, ছুটে আসেন বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ছোট্ট এই গ্রাম এখন ভ্রমণ পিপাসুদের কেন্দ্রবিন্দু। জুলাই থেকে শাপলা ফোটা শুরু হয়। বিলের সঙ্গে যাদের বাড়ি, শাপলা তুলতে কিংবা মাছ ধরতে নৌকাই তাদের একমাত্র বাহন। এক পলকে মনে হবে, কোনো ক্যানভাসে আঁকা লাল শাপলার চিত্র। বিলজুড়ে শাপলার রাজত্ব।
তবে নরাট বিলে লাল শাপলার রাজত্ব ছাড়াও রয়েছে মনোলোভা পদ্ম ফুলের বিল। বিলটির (ভিকারটেক বর্জাপুর) অংশে রয়েছে পদ্ম ফুলের বিলের একটি শাখা, শুধুমাত্র ভিকারটেক অংশে রয়েছে আরো একটি শাখা। এছাড়াও কুশদী এলাকার বৈরাইট বিলও রয়েছে পদ্ম ফুলের আরো একটি শাখা। আর বৈরাইট বিল থেকেই স্থানীয় অন্য বিলগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু মনোলোভা পদ্মের। নরাইট বিলে রয়েছে পদ্ম ফুলের তিনটি শাখা।নরসিংদীর মনোহরদী থেকে ঘুরতে এসেছেন সাফাত জামিল সাগরসহ তার কয়েকজন বন্ধু। তিনি (সাগর) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, তার শখ ছবি তোলা ও ঘুরে বেড়ানো। সময় পেলেই সঙ্গীদের নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের ছবি তুলতে এবং খুব কাছ থেকে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে। দীর্ঘদিন ধরেই ইচ্ছা শাপলা বিলে ছবি তুলবেন। বাড়ির পাশেই রয়েছে এতো সুন্দর জায়গা। যার নাম নরাইট বিল।
গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ও টোক ইউনিয়নে এর অবস্থান। বছরের এ সময়ে শাপলা ফুল ফোটায় সবাই এটিকে শাপলা বিল বলেই ডাকেন। শাপলা বিলের হদিস পেতেই মনের মাঝে এক কল্পনার জগৎ তৈরি হলো রাফাত জামিল সাগরসহ তার বন্ধুদের। অনেকের মতো আরো ঘুরতে এসেছেন স্থানীয় বঙ্গতাজ ডিগ্রী কলেজে পড়ুয়া ছাত্র মোঃ নাঈম, তার সাথে এসেছে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া মোঃ মাসুম।এছাড়াও এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় শ্রীপুর উপজেলার মাওনা এলাকা থেকে শাপলা বিলে ঘুরতে আসা আনজামুল সিয়ামের সাথে। তিনি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। সঙ্গে ঘুরতে এসেছেন তার বন্ধুরা। তাদের মনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে লালন করা ইচ্ছে ছিল কাপাসিয়া উপজেলার বারিষাব ইউনিয়নের নরাইট লাল শাপলার বিলে ঘুরতে আসবেন। অবশেষে এলেন তার বন্ধুদের নিয়ে।
ভ্রমণ পিপাসু যারা এখানে যেতে চান, তাদের কাপাসিয়া সদর থেকে প্রথমে আমরাইদ বাজারে যেতে হবে। আমরাইদ বাজারে যাওয়ার পর পূর্বদিকের রাস্তা ধরে গিয়াসপুর পাড় হলেই জালাল (জইল্লা) মার্কেট। জালাল মার্কেটে গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে। দিক-নির্দেশনা মতে আনজামুল সিয়াম সকাল সকাল এসে পৌঁছান শাপলা বিলে। সিয়ামের মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা এসেছেন বিলের জলে ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে। আশা করা যায়, শিগগির এটি দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হবে।গাঢ় সবুজের বুকে এ যেন বাংলার ‘লাল স্বর্গ’। বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রঙের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলা বেশি। বিলের যত ভেতরে চোখ যায় ততই লালের আধিক্য। একপর্যায়ে সিয়ামের মনে হলো শাপলার রাজ্যে হারিয়ে গেছেন তিনি। দেখতে পেলেন, কেউ কেউ মুঠো ভরে শাপলা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বুঝতে পারলেন, শাপলার বিল শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, জীবিকারও মাধ্যম।
বিল থেকে পদ্ম ফুল তুলে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ভিকারটেক এলাকার ৮-১০টি পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। এখানকার কেউ কেউ বিলের শাপলা ও পদ্ম ফুলের ওপর নির্ভরশীল। কেউ শাপলা তোলেন, কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।অনেকের পছন্দের তরকারি শাপলা। গ্রামের মতো শহরেও দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সহজলভ্য শাপলা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শাপলায় আছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুণ বেশি। শাপলা চর্ম ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী।
এছাড়াও শাপলা ও পদ্ম ফুলের বিলের অপার সৌন্দর্য ঘুরে দেখতে চাইলে স্থানীয়দের কাছ থেকে ছোট নৌকা ভাড়া করা যায়। বিলে ভেসে বেড়াতে বেড়াতে আত্মতৃপ্তি অনুভূত হবে। যেন এই তো শুধু আমার সোনার বাংলাদেশ নয়, সুখের ঠিকানা। এত কিছুর মাঝে আবার দেখা মিলবে অনেক পাখি। বক, মাছরাঙা, শালিক, চড়ুঁইসহ নাম না জানা পাখি এসে বিলের মাঝে কিচিরমিচির করে তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। যারা গাজীপুরের আশেপাশে থাকেন, তারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে একদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন। কম খরচে সহজে যাওয়ার জন্য উত্তম জায়গা এটি। এই বিলে নৌকায় চরে কাঁটাতে পারবেন সুন্দর মুহূর্ত।