রাজশাহীতে বৃষ্টি নেই শ্রাবণেও চৈত্রের খরা


♦️শুকিয়ে গেছে আমনের ক্ষেত _পাট জাগ দেয়ার পানির অভাব
আবুল হাসনাত অমি : গত আষাঢ় মাসে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টি মেলেনি রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে। শ্রাবণে এসেও বৃষ্টির দেখা নেই। ১ শ্রাবণে এক পশলা বৃষ্টির পর কদিন ধরে আবারো রুক্ষ্ম আবহাওয়া। টানা রোদ্রজ্জল অবস্থায় এরই মধ্যে শুকিয়ে গেছে এ অঞ্চলে রোপিত আমনের ক্ষেত। মাঠে পাট কাটার উপযোগী হলেও জাগ দেয়ার পানির অভাবে পাট কাটার সাহস পাচ্ছেন না কৃষক। এসব নিয়ে চরম অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষক। রাজশাহী অঞ্চলে ব্যাপক পুকুর ভরাট ও বৃক্ষনিধনের ফলে বৃষ্টি কম হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। রাজশাহী শহরে গত দশ বছরে ৯০ ভাগ পুকুর ভরাট করা হয়েছে। পুকুর ভরাটের পাশাপাশি ব্যাপক বৃক্ষনিধনও করা হয়। ফলে আবহাওয়া রুক্ষ্ম হয়ে উঠেছে। ভরা বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টি নেই।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসনের এক সভায় জানিয়েছেন, রাজশাহীতে ভয়াবহ কোনো অগ্নিকাণ্ড ঘটলে পানির অভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই এখন থেকে যে কটা পুকুর আছে তা যেন আর ভরাট করতে না দেয়া হয়।
এদিকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নগরীর পুকুরগুলো রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে নগরীতে দিনে-রাতে পুকুর ভরা চলছেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুবছর ধরে পাটের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার রাজশাহীতে বেড়েছে পাটের চাষ। গত বছরের তুলনায় এবার জেলায় পাট চাষ বেড়েছে ৪৪২ হেক্টর জমিতে। তবে এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পাট জাগ দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। একই অবস্থা আমন ধান চাষের ক্ষেত্রেও। অনাবৃষ্টির কারণে পাট ও ধান নিয়ে উভয় সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, এখনো পাট কাটা শুরু হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে পুরোদমে পাট কাটা শুরু হবে। তবে গত বছর পাটের দাম ভালো দিচ্ছেন অনেকে। পাওয়ায় এ বছর চাষের পরিমাণ বেড়েছে।
জেলার পবা উপজেলার একজন পাটচাষি বলেন, গত বছর তিনি ৩ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছিলাম। বিক্রি করে ভালো দামও পেয়েছিলাম। তাই এ বছর ৭ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের আবাদও ভালো হয়েছে। এখনো পাট কাটা শুরু করিনি। কারণ পাট জাগ দেয়ার মতো পানি নেই। তিনি আরো বলেন, পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। পাট কাটারও সময় হয়েছে। অনেকেই পাট কেটেছে। কিন্তু খাল-বিলে পানি নেই। তাই অনেকেই পাট কাটতে পারছে না।
আরেক পাটচাষি জানান, তার জমিতে পাট আছে। পাট কেটে সেই জমিতে ধান লাগাবেন তিনি। এদিকে বীজতলায় চারা প্রস্তুত।
কিন্তু পানির অভাবে পাট কাটতে পারছেন না। একই কারণে ধানও লাগাতে পারছেন না। ফলে উভয় সংকটে পড়েছেন তিনি। তার বাড়ির পাশের খালে পানি থাকলেও পাট জাগ দেয়ার মতো পানি জমে নেই বলে জানান তিনি।
স্থানীয় পাট ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে পুকুর, খালে পানি নেই। তাই পাট কাটতে পারছেন না কৃষকরা। তবে নিচু এলাকাগুলোর পাটের জমিতে পানি জমেছে। সেগুলো কেটে সেখানেই জাগ
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, রাজশাহীতে গত বছরের চেয়ে পাট চাষ বেড়েছে। বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে এখনো রাজশাহীতে সেভাবে পাট কাটা শুরু হয়নি। আশা করা হচ্ছে বৃষ্টিপাত হওয়া সাপেক্ষে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে পুরোদমে পাট কাটা শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণে ধীরগতিতে চলছে আমনের চাষাবাদ। অনেকের রোপিত জমি শুকিয়ে গেছে। ধান ও পাটচাষিরা এখন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছেন। আশানুরূপ বৃষ্টিপাত হলে একদিকে কাটা পড়বে পাট অন্যদিকে লাগানো হবে আমন ধান। রাজশাহী আবহাওয়া অফিস জানায়, এখন বর্ষা মৌসুম। ইতোমধ্যে শ্রাবণ মাস শুরু হলেও বৃষ্টি নেই রাজশাহীতে।