জনবান্ধব পদক্ষেপই আরএমপিকে নিয়ে গেছে সাফল্যের ঠিকানায়


নগরবাসীর কাছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) এখন এক আস্থার নাম। জনবান্ধব নানা পদক্ষেপে প্রশংসিত হয়েছে আরএমপি নামের এ পুলিশ ইউনিট।
মূলত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনমানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ প্রতিষ্ঠান গণ্ডির বাইরেও অনেক গুরুদায়িত্ব পালন করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। বিশেষভাবে করোনা অতিমারির সময় এ সংস্থার জনমুখী নানা উদ্যোগ হার মানিয়েছে জনপ্রতিনিধিদেরকেও। তবে নগরবাসীর প্রত্যাশাও অনেক প্রতিষ্ঠানটির প্রতি। আমরা বিশ্বাস করি, আরএমপি সে প্রত্যাশা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করবে।
আমি ১৯৮৬ সালে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে আসার পর দেখলাম- রাজশাহী নগরীর পাড়া-মহল্লায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়ই সংঘর্ষ হচ্ছিল। এতে কয়েক ডজন মানুষ প্রাণ হারায়। তার মধ্যে কয়েকটি হত্যাকাণ্ড বেশ চাঞ্চলা সৃষ্টি করে। যেমন: পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারিকে কেন্দ্র করে দরগাপাড়া ও ষষ্ঠিতলা এলাকার লোকজনের সংঘর্ষে ষষ্ঠিতলার মোস্তাকিম নামে একজন নিহত হয় । কাজিহাটায় মোসাদ্দেক ও টিকাপাড়ায় হেলাল খুন হয়। হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি নগরজুড়ে চলতো চাঁদাবাজি। বিশেষ করে হেতম খা লিচুতলা ও পিডিবি এলাকা, বন্ধগেট এবং বেলদারপাড়াসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে প্রায় প্রতিদিনই ঘটতো ছিনতাইয়ের ঘটনা। কোনোমতেই রোধ হচ্ছিলো না এসব অপরাধ। এছাড়া ৮০ ও ৯০’র দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রগতিশীল বিভিন্ন ছাত্র-সংগঠনের সাথে ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষে মাঝেমধ্যে বন্ধ হয়ে যেতো প্রতিষ্ঠানটি। এতে রাবিতে তৈরি হয়। সেশনজট।
উপরে বর্ণিত নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে ১৯৯২ সালের ১ জুলাই চারটি থানা নিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আরএমপি । তৎকালীন বোয়ালিয়া, রাজপাড়া, মতিহার ও শাহমখদুম- এ চার থানার মোট আয়তন ছিল ৯২ বর্গকিলোমিটার। আরএমপি’র প্রথম পুলিশ কমিশনারের পথটি অলঙ্কৃত করেন জনাব এম রফিকুল আলম খান। তবে বর্তমানে থানার সংখ্যা ৪ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১২। আয়তন বেড়ে ৪৭2- বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন ৮টি থানা উদ্বোধন করেন। আর এমপি-তে যুক্ত হয়েছে নানা আধুনিক প্রযুক্তি ও কাজের সুবিধার তৈরি হয়েছে অভ্যন্তরীণ নানা ইউনিট ও সেল। সাইবার ক্রাইম ইউনিট, অপারেশন কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টার, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব, ভিকিটিম সাপোর্ট সেন্টার-সহ নানা অভিনব উদ্ভাবন এগিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। সিসিটিভি’র আওতায় নিরাপত্তার চাদরে দেশের পরিচ্ছন্ন এ শহর। নিয়ন্ত্রণে এসেছে রাজশাহীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি।
শুরুটা করেছিলেন জনাব এ কে এম শামসুদ্দিন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের নানা তাণ্ডবের ঘটনায় ১৯৯৬ সালে অপরাধ সমূলে উৎপাটনের চেষ্টা চালান তৎকালীন এ পুলিশ কমিশনার। রাবির পরিস্থিতি শান্ত করে শিবিরের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসেন তিনি। ফলে কমে আসে সেশনজটও। এটা আরএমপি’র অন্যতম অর্জন। অপরাধ দমনে সবসময়ই। তৎপর আরএমপি। গত মার্চ মাসে নগরীর ফায়ার সার্ভিস এলাকায় এক গৃহবধূকে খুনের ঘটনা ঘটে। ব্লুলেস ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত আসামিকে বরিশালের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে আরএমপি’র বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশ। আসামি ফৌজদারি কার্যবিধি’র ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় আদালতে। এসব অর্জন আরএমপি’র।
এছাড়া ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনা অভিমারির প্রাদুর্ভাবের পর জনমুখী কার্যক্রমে নজর দেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক। নগরীর ১০ হাজার মানুষের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয় আরএমপি’র পক্ষ থেকে। পরিবেশ রক্ষায় ৫ হাজার বৃক্ষরোপণ করা হয়। তা ছাড়া জীবনবাজি রেখে করোনা আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও খাবার পৌঁছে দেন।
আরএমপি’র পুলিশ সদস্যরা। এ অবদান রাজশাহীবাসী কোনোদিনও ভুলবে না।
তবে আশঙ্কার বিষয় এই যে- কিছু পুলিশ সদস্যের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে এসব অর্জন ম্লান হয়ে যেতে পারে। ক্ষণ হতে পারে পুলিশের সুনাম। যেমন ২০২১ সালে আরএমপি’র এক কর্মকর্তা ও আরেকটি ফোর্সের এক কর্মকর্তার মধ্যে ফোনালাপ ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। সেজন্য সজাগ থাকতে হবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। কোনো পুলিশ কর্মকর্তা মিথ্যা মামলায় জনসাধারণকে যাতে হয়রানি না করে, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। পুলিশ সদস্য অপরাধ করলেও তার বিরুদ্ধে গ্রহণ করতে হবে কঠোর পদক্ষেপ।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই । রাজশাহীতে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক। এতে তরুণ প্রজন্ম বিপদগামী হচ্ছে। বাড়ছে অপরাধ । ফলে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির শতভাগ প্রয়োগ দেখতে চাই। যদি আরএমপি মাদককে নির্মূল করতে পারে তবে প্রতিষ্ঠানটি আরও প্রশংসা কুড়াবে সর্বমহলে। জনসেবামূলক কাজের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাক এ প্রতিষ্ঠান। আরএমপির প্রতিটি সদস্যের জন্য শুভকামনা।
লেখক, সাইদুর রহমান
সভাপতি,রাজশাহী প্রেসক্লাব।